|

৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ প্রশ্ন ও উত্তর

৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ: পৃথিবীর সব ভাষায়ই উপভাষা আছে। এক অঞ্চলের উপভাষা অন্য অঞ্চলের মানুষ বোঝে না বলে প্রমিত ভাষার প্রয়োজন হয়। বিশ শতকের শুরুতে কলকাতার শিক্ষিত লোকের কথ্য ভাষাকে লেখ্যরীতির আদর্শ হিসেবে চালু করার চেষ্টা চলে। এটি তখন চলিত রীতি নামে পরিচিতি পায়। এই রীতিতে ক্রিয়া, সর্বনাম, অনুসর্গ ইত্যাদি শ্রেণির শব্দ হ্রষ হয় এবং তৎসম শব্দের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কমে। প্রথমদিকে চলিত রীতিতে শুধু সাহিত্য রচিত হতো, দাপ্তরিক কাজ ও বিদ্যাচর্চা ইত্যাদি হতো সাধু ভাষায়।

বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে চলিত রীতি সাধু রীতির স্থান দখল করে নেয়। ধীরে ধীরে জীবনের সব ক্ষেত্রে সাধু রীতিকে সরিয়ে চলিত রীতি আদর্শ লেখ্য রীতিতে পরিণত হয়। একুশ শতকের সূচনায় এই চলিত রীতিরই নতুন নামকরণ করা হয় প্রমিত রীতি। প্রমিত ভাষায় শব্দের উচ্চারণের চর্চা করার জন্য যেকোনো রচনা সরবে পাঠ করতে হয়। প্রমিত বাংলায় কথোপকথনের উপযুক্ত স্থান হলো বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের সহপাঠী, শিক্ষক, উপরের বা নিচের ক্লাসের শিক্ষার্থী এবং বাড়িতে বাবা-মা, ভাই-বোন, চাচা-চাচি, দাদা-দাদি ও অন্যান্য স্বজনের সাথে সহজে প্রমিত বাংলায় কথা বলা যায়।

প্রমিত বাংলায় কথা বলার চর্চাকে উৎসাহিত করতে হবে। প্রমিত ভাষায় শব্দের উচ্চারণ ঠিকমতো করতে হয়। প্রাসঙ্গিকভাবেই মমতাজউদদীন আহমদের ‘সুখী মানুষ’ নাটকের কথা বলা যায়। যারা নাটক লেখেন তাঁদের নাট্যকার বলে। নাটকের চরিত্রগুলোর মধ্যে যেসব কথা হয়, সেগুলোকে সংলাপ বলে। এই নাটকের সংলাপে প্রমিত ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। এই সংলাপ যাদের মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয় তাদের বলে চরিত্র। সংলাপ পাঠ করার সময়ে প্রমিত উচ্চারণের দিকে খেয়াল রাখতে হয়। ‘সুখী মানুষ’ নাটক থেকে আমরা কিছু প্রমিত শব্দের উদাহরণ টেনে তার উচ্চারণ দেখাতে পারি। যেমন : অত্যাচারী, অন্ধকার, অসুখ, কবিরাজ, চাকর, পাগল, বখশিশ মানুষ, মোড়ল, সত্যি ইত্যাদি। প্রমিত ভাষায় শব্দগুলোর উচ্চারণ ঠিকমতো হলে বানানের ক্ষেত্রে সামান্য পরিবর্তন ঘটে। যেমন : ওত্তাচারি, অধোকার, অশুখ, কোবিরাজ, চাকোর, পাগোল্, বোখ্শিশ, মানুশ্, মোড়োল্, শোতি ইত্যাদি। যেকোনো ক্ষেত্রে চর্চাই মানুষকে সাফল্য এনে দেয়। কথাটা মনে রেখেই সুখী মানুষ’ নাটকের কোনো চরিত্রের মতো প্রমিত শব্দের উচ্চারণের চর্চা করতে হবে।


৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ স্পেশাল কুইজ

প্রশ্ন ১। ‘সুখী মানুষ’ নাটকটি কার লেখা?
উত্তর: ‘সুখী মানুষ’ নাটকটি মমতাজউদ্দীন আহমদের লেখা।

প্রশ্ন ২। ‘কি চাহ শঙ্খছিল’ নাটকটির লেখক কে?
উত্তর: “কি চাহ শঙ্খছিল’ নাটকটির লেখক মমতাজউদ্দীন আহমদ।

প্রশ্ন ৩। যারা নাটক লেখেন— তাঁদের কী বলে?
উত্তর: যাঁরা নাটক লেখেন— তাঁদের নাট্যকার বলে।

প্রশ্ন ৪। নাটকে একজনের সঙ্গে অন্যজনের যেসব কথা হয় সেগুলোকে কী বলে?
উত্তর: নাটকে একজনের সঙ্গে অন্যজনের যেসব কথা হয় সেগুলোকে সংলাপ বলে।

প্রশ্ন ৫। ‘সংলাপ’ যাদের মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয় তাদেরকে কী বলে?
উত্তর: ‘সংলাপ’ যাদের মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয় তাদেরকে চরিত্র বলে।

প্রশ্ন ৬। ‘সুখী’ মানুষ নাটকের সংলাপে কোন ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে?
উত্তর: ‘সুখী’ মানুষ নাটকের সংলাপে প্রমিত ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৭। ‘সুখী মানুষ’ নাটকে কোন চরিত্রের বয়স সবচেয়ে কম?
উত্তর: ‘সুখী মানুষ’ নাটকে ২০ বছর বয়সী রহমত চরিত্রের বয়স সবচেয়ে কম।

প্রশ্ন ৮। ‘সুখী মানুষ’ নাটকে মোড়ল চরিত্রের বয়স কত?
উত্তর: ‘সুখী মানুষ’ নাটকে মোড়ল চরিত্রের বয়স ৫০ বছর।

প্রশ্ন ৯। কে সুবর্ণপুরের মানুষকে বড়ো জ্বালিয়েছে?
উত্তর: মোড়ল সুবর্ণপুরের মানুষকে বড়ো জ্বালিয়েছে।

প্রশ্ন ১০। মানুষের কান্না দেখলে কে হাসে?
উত্তর: মানুষের কান্না দেখলে মোড়ল হাসে।

প্রশ্ন ১১। মনের মধ্যে অশান্তি থাকলে ওষুধে কাজ হয় না।’- এটি কার সংলাপ?
উত্তর: মনের মধ্যে অশান্তি থাকলে ওষুধে কাজ হয় না। এটি হাসুর সংলাপ।

প্রশ্ন ১২। মানুষ এবং প্রাণী অমর নয়’- এটি কার সংলাপ?
উত্তর: মানুষ এবং প্রাণী অমর নয়’- এটি কবিরাজের সংলাপ।

প্রশ্ন ১৩। ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’– কবিরাজ এ কথা কাকে বলেছে?
উত্তর: ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’- কবিরাজ এ কথা মোড়লকে বলেছে।

প্রশ্ন ১৪। ‘সুখী মানুষের জামা না হলে অসুখী মোড়ল বাঁচবে না। এটি কার সংলাপ?
উত্তর: সুখী মানুষের জামা না হলে অসুখী মোড়ল বাঁচবে না। এটি কবিরাজের সংলাপ।

প্রশ্ন ১৫। আমার তো কোনো জামা নেই ভাই!’ এই সংলাপটি কার?
উত্তর: আমার তো কোনো জামা নেই ভাই!’ এই সংলাপটি বনে থাকা কাঠুরে লোকটির।

প্রশ্ন ১৬। বহু লোকের একসাথে কথা বলাকে কী বলে?
উত্তর: বহু লোকের একসাথে কথা বলাকে কোলাহল বলে।

প্রশ্ন ১৭। ‘বাঘের চোখ আনা’ কথাটির মানে কী?
উত্তর: ‘বাঘের চোখ আনা’ কথাটির মানে কঠিন কাজ করা।

প্রশ্ন ১৮। ‘কবিরাজ’ শব্দের প্রমিত উচ্চারণ কী?
উত্তর: ‘কবিরাজ’ শব্দের প্রমিত উচ্চারণ কোবিরাজ।

প্রশ্ন ১৯। ‘দুঃখী’ শব্দের প্রমিত উচ্চারণ কী?
উত্তর: ‘দুঃখী’ শব্দের প্রমিত উচ্চারণ দুখি।

প্রশ্ন ২০। ‘সোনাদানা’ শব্দটি প্রমিত উচ্চারণে কী হবে?
উত্তর: ‘সোনাদানা’ শব্দটি প্রমিত উচ্চারণে শোনাদানা হবে।


৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

প্রশ্ন ১। সুখকে বড় কঠিন জিনিস বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: অধিকাংশ মানুষই নিজের অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। প্রত্যেক মানুষেরই মনের মধ্যে কোনো না কোনো অতৃপ্তি থাকে। বস্তুত কেউই সম্পূর্ণ তৃপ্ত হতে পারে না। তাই সুখকে বড় কঠিন জিনিস বলা হয়েছে।

প্রশ্ন ২। সুখী মানুষটি চোরকে ভয় পায় না কেন?
উত্তর: সুখী মানুষটির ঘরে কোনো রকম সম্পদ ছিল না বলে চোরকে ভয় পায় না। সুখী মানুষ বনের মধ্যে একাকী বাস করে। তার ঘরে সোনাদানা, আসবাবপত্র, জামাকাপড় কিছুই ছিল না। তার কোনো সম্পদ ছিল না বলে চুরি হওয়ার বা হারানোরও ভয় ছিল না। এজন্য সে চোরকে ভয় পায় না।

প্রশ্ন ৩। ‘সুখী মানুষ’ নাটিকার মোড়লের নিস্তার নেই কেন?
উত্তর: অত্যাচারী মোড়লের দুরারোগ্য ব্যাধি হয়েছে বলে তার নিস্তার নেই। মোড়ল এককালে গায়ের জোরে নির্বিচারে মানুষকে অত্যাচার করেছে। মাজলুমের বেদনা উপলব্ধি করতে চায়নি। হাসুর ধারণা অত্যাচারের ফলেই মোড়লের হাড়-মড়মড় রোগ হয়েছে। এ রোগের ওষুধ দুষ্প্রাপ্য। তাই মোড়লের নিস্তার নেই।

প্রশ্ন ৪। ‘মনের মধ্যে অশান্তি থাকলে ওষুধে কাজ হয় না।’ কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: শারীরিক সুস্থতার পূর্বশর্ত মনের পবিত্রতা। অন্যায় ও অনৈতিকভাবে উপার্জিত অর্থ-বিত্তই মানুষের অশান্তির মূল কারণ। সৎপথে নিজ শ্রমে উপার্জিত অর্থে জীবিকানির্বাহের মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সুখ।

প্রশ্ন ৫। ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’– কবিরাজ একথা কেন বলেছিল?
উত্তর: অতিরিক্ত লোভের কারণেই মোড়ল কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এজন্য কবিরাজ মোড়লকে একথা বলেছিল। মোড়ল ছিল খুবই অত্যাচারী ও লোভী মানুষ। লোভের বশবর্তী হয়ে সুবর্ণপুরের মানুষকে ঠকিয়ে, জোর করে মানুষের সম্পদ কেড়ে নিয়েছিল। যার জন্য সে আজ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। তাই কবিরাজ মোড়লকে এই কথাটি বলেছিল।

প্রশ্ন ৬। সুখী মানুষটির প্রাণখোলা হাসির কারণ কী?
উত্তর: সুখী মানুষটির তেমন কোনো সম্পদ নেই। তাই হাসু যখন তার জামাজুতা, টাকা-পয়সা চোরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তখন সে হেসে দেয়। যখন হাসু ও রহমত মোড়লের জন্য জামা খুঁজতে যায় তখন সুখী মানুষের দেখা মেলে। হাসু তার কাছে জানতে চায় যে সে একা থাকতে ভয় করে কিনা এবং সে আরও তার কাছে জিজ্ঞেস করে যে চোরে তার সোনাদানা জামাজুতা নিয়ে গেলে তখন সে কী করবে। এ কথা শুনে লোকটি প্রাণখোলা হাসি হাসে। কারণ এসব কিছুই তার কাছে নেই।

প্রশ্ন ৭। ‘পাহাড়, সমুদ্র, চন্দ্র, নক্ষত্র কিছুই আনতে হবে না।’ কবিরাজ কেন এ কথা বলেছেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: পাহাড়, সমুদ্র, চন্দ্র, নক্ষত্র কিছুই আনতে হবে না। কবিরাজ এ কথা বলার কারণ হলো— মোড়ল যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন ফুফাতো ভাই হাসু ও রহমত তাদের জীবনের যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি। মোড়লের অসুস্থতার যখন হাসু ও রহমত কাতর হয়ে পড়ে তখন কবিরাজ তাদেরকে বলল যে, একটা কঠিন কাজ করতে হবে। এটা শুনে হাসু বলল, বাঘের চোখ আনতে হবে নাকি? কবিরাজ বলল, কাজটি আরও কঠিন। এটা শুনে রহমত বলল, হিমালয় পাহাড় আনতে হবে নাকি? মূলত হাসু ও রহমতের এসব কথা শুনেই কবিরাজ উক্ত কথাটি বলেছেন।

প্রশ্ন ৮। মোড়লের সমস্যা সমাধান না হওয়ার কারণ কী?
উত্তর: সুখী মানুষের জামা না পাওয়ায় মোড়লের সমস্যার সমাধান হলো না। মোড়ল অত্যাচারী ব্যক্তি ছিল। সে মানুষদের মনে কষ্ট দিয়ে তাদের সম্পদ কেড়ে নিয়ে ধনী হয়েছিল। সে অনেক সম্পদের মালিক ছিল কিন্তু তার জীবনে শান্তি ছিল না। ফলে সে চরম অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। কবিরাজ বলেছিল কোনো সুখী মানুষের জামা গায়ে দিলে তার অসুস্থতা চলে যাবে। কিন্তু পাঁচ গ্রাম খুঁজেও কোনো সুখী মানুষ পাওয়া গেল না। অবশেষে একজন লোককে পাওয়া গেল যে বনে কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু এই সুখী মানুষটির কোনো জামা ছিল না। তাই সুখী মানুষের জামা না পাওয়ায় মোড়লের সমস্যার সমাধান হলো না।

প্রশ্ন ৯। শব্দের বিশুদ্ধ উচ্চারণের প্রয়োজনীয়তা কী?
উত্তর: উচ্চারণ হলো বাক্‌শিল্পের অন্যতম উপাদান। তাই উচ্চারণের বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য সূত্রনির্ভরতা, স্বরনির্ধারণ, অনুশীলন এবং সর্বোপরি আঞ্চলিকতা পরিহারের জন্য উচ্চারণ অপরিহার্য।


আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ প্রশ্ন ও উত্তর


আশাকরি “৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ প্রশ্ন ও উত্তর” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। ভিডিও ক্লাস করতে সাবক্রাইব করে রাখতে পারেন আমাদের YOUTUBE চ্যানেল এবং আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে চাইলে কানেক্ট থাকতে পারেন আমাদের FACEBOOK পেজে।