|

অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ২০২৩

অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ২০২৩: অপরিচিতা কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি ছোট গল্প। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এই গল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছরই এইচএসসি পরিক্ষায় অপরিচিতা গল্প থেকে সৃজনশীল, ও এমসিকিউ প্রশ্ন আসে। আজকের আর্টিকেলে অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ২০২৩ পিডিএফ সহ শেয়ার করা হবে। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।


অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

১. আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবারের শিক্ষিত ছেলে কৌশিকের মা-বাবা তার মতামত না নিয়েই সুরবালার সঙ্গে বিয়ে ঠিক করে। সুরবালার বাবার অঢেল সম্পদ৷ গোপনে ঘটকের মধ্যস্থতায় এ বিয়েতে বরপক্ষকে নগদ টাকা, গাড়ি এবং ঢাকার অভিজাত এলাকায় একটি ফ্ল্যাট দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যৌতুকের বিষয়টি জানতে পেরে কৌশিক ও সুরবালা বেঁকে বসে এবং সম্পূর্ণ যৌতুকবিহীনভাবে পরস্পর বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়।

ক) অনুপমের বাবার পেশা কী ছিল?
খ) “এই তো আমি জায়গা পাইয়াছি।” ব্যাখ্যা কর।
গ) উদ্দীপকের কৌশিকের সঙ্গে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের তুলনা কর।
ঘ) “উদ্দীপকে ‘অপরিচিতা’ গল্পে বর্ণিত সামাজিক অসঙ্গতি অনেকাংশেই প্রতিফলিত।” যাচাই কর।

১ নং প্রশ্নের উত্তর

ক) অনুপমের বাবার পেশা ছিল ওকালতি।

খ) এই তো আমি জায়গা পাইয়াছি’—উক্তিটি দ্বারা কল্যাণীর কাছাকাছি থাকতে পেরে, তাকে দেখতে পেরে, তার কিছু কাজ করে দিতে পেরেই অনুপম নিজেকে সুখী ও সার্থক ভাবে —এই মনোভাবই প্রকাশ পেয়েছে। মায়ের সাথে যাত্রাপথে গাড়িতে উঠার সময় কল্যাণীর কণ্ঠে অনুপম প্রথম শুনতে পায় ‘জায়গা আছে’ কথাটি। ‘জায়গা আছে’ কথাটি অনুপমের কাছে চিরজীবনের গানের ধুয়া হয়ে রয়েছে। কল্যাণীকে বিয়ে করতে পারেনি বলে অনুপমের কোনো কষ্ট নেই, বরং সুযোগ হলে তার ছোটখাটো কাজ পর্যন্ত সে করে দেয়। আর মনে মনে ভাবে, এই তো সে জায়গা পেয়েছে। যদিও তার সম্পূর্ণ পরিচয় পায়নি, আজও সে অপরিচিতা; তবুও ভাগ্য ভালো যে, সে জায়গা পেয়েছে।

গ) ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও আত্মমর্যাদার দিক দিয়ে উদ্দীপকের কৌশিকের সঙ্গে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের কোনো মিল নেই। উদ্দীপকে দেখা যায়, কৌশিক শিক্ষিত ও সচ্ছল পরিবারের সন্তান। কৌশিকের মা-বাবা তার মতামত না নিয়েই ধনাঢ্য পরিবারের কন্যা সুরবালার সঙ্গে বিয়ে ঠিক করে। মা-বাবার ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিয়ে সুবোধ বালকের মতো কৌশিক তা মেনেও নেয়। কিন্তু গোপনে যৌতুক গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে জানতে পেরে কৌশিক বিদ্রোহ করে বসে।

যৌতুককে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে পাত্র-পাত্রী, উভয়ে পরস্পরকে যৌতুকবিহীনভাবে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। এক্ষেত্রে দেখা যায়, কৌশিক মা-বাবার পছন্দকৃত পাত্রীকে বাধ্যগত সন্তানের মতো মেনে নিলেও কোনো সামাজিক অনাচার বা ঘৃণ্য প্রথাকে মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। তার এরূপ বীরোচিত সিদ্ধান্তকে পাঠকমাত্রই সশ্রদ্ধচিত্তে সাধুবাদ জানাবে। উদ্দীপকের কৌশিকের সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের ব্যক্তিত্বের কোনো মিল নেই। গল্পের অনুপম যেন তার মামার হাতের পুতুল। মামার মতামতের ওপর ভিত্তি করে তার সকল ভালোলাগা-মন্দলাগা, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, মতামতের জলাঞ্জলি দিতে হয়।

মামার অন্যায্য যৌতুকের দাবি ও তা আদায়ের কদর্য ভঙ্গি অনুপম মুখ বুজে মেনে নিয়েছে। ফলে মনের মানসীকে পাওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে তার। নির্লজ্জের মতো তাকে বর বেশে ফিরে আসতে হয়েছে বিয়ে বাড়ি থেকে। কনের বাবা তার মতামত জানতে চাইলেও সে থেকেছে নির্বাক, নিস্তব্ধ। তার এই মেরুদণ্ডহীনতা পাঠককুলকে হতাশ করে। তাই বলা যায, প্রয়োজনের মুহূর্তে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে কৌশিকের ব্যক্তিমর্যাদা যে অনন্য উচ্চতায় আসীন, সেই একই ক্ষেত্রে স্বকীয় সিদ্ধান্তের অভাবে অনুপমের চরিত্র মলিন ও নিষ্প্রভ রূপে ধরা পড়ে।

ঘ) উদ্দীপকে ‘অপরিচিতা’ গল্পে বর্ণিত সামাজিক ব্যাধি যৌতুক প্রথার ছায়াপাত ঘটেছে। সমাজে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি কুপ্রথার নাম যৌতুক। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে রয়েছে এই কাল নাগিনীর বিষ। প্রতি বছর হাজারো নারী যৌতুকের নিঠুর বলি হয়ে জীবন দিচ্ছে। অনেক নারী বেঁচে থেকেও মরে আছে। সমাজের কোনো শ্রেণি বা অবস্থানের মানুষই যে যৌতুকের করাল থাবা থেকে মুক্ত নয়, তারই প্রমাণ বহন করে উদ্দীপক ও আলোচ্য গল্পটি।

উদ্দীপকের ক্ষুদ্র প্রেক্ষাপটে যৌতুক প্রথার সকরুণ চিত্র উপস্থাপিত। আর্থিকভাবে সচ্ছল কৌশিকের পরিবার এখানে যৌতুক গ্রহণের অভিপ্রায়ে দণ্ডিত। যদিও শিক্ষিত ছেলে কৌশিকের নিকট মা-বাবার এমন অভিলায গ্লানিকর ঠেকেছে। একে সে দেখেছে স্বীয় ব্যক্তিত্বের বিসর্জন হিসেবে। তাইতো এই আত্মপ্রত্যয়ী যুবক পেরেছে সমাজের প্রচলিত ঘৃণ্য রীতি-নীতিকে ভাঙতে। এদিকে তার পাত্রী সুরবালার বাবা কিন্তু যৌতুককে অলঙ্ঘনীয় প্রথা হিসেবেই মেনে নিয়েছিলেন। তাই তো কন্যাকে পাত্রস্থ করার লক্ষ্যে অর্থ-কড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট প্রদানেও পিছপা হননি। তবে একে নারীত্বের অবমাননা জ্ঞান করে সুরবালাও কৌশিকের মতো যৌতুকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। তবে উদ্দীপক থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, রাষ্ট্র ও সভ্যতাবিরোধী হওয়া সত্ত্বেও যৌতুকের ন্যায় সামাজিক অসঙ্গতি আজও দোর্দণ্ড প্রতাপের সাথে আমাদের সমাজে বিরাজমান।

অনুরূপভাবে বিয়ে উপলক্ষে যৌতুক নিয়ে নারীর চরম অবমাননার প্রতিবাদ ‘অপরিচিতা’ গল্পটির অন্যতম উপজীব্য। গল্পে যৌতুক নিয়ে কল্যাণীর চরম অবমাননাকালে তার ব্যক্তিত্বরহিত বর পরিবারতন্ত্রের কাছে অসহায় পুতুল হয়ে থেকেছে। আসলে, সমাজে জেঁকে বসা পণপ্রথা যে পুরুষতন্ত্রেরই হাতিয়ার, নারীত্বের অবমাননার দলিল গল্পটি পড়ে সে কথা বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না। আত্মমর্যাদাশীল কল্যাণী ও তার বাবা তাই সে বিয়ে ভেঙে দিতে একটুও কসুর করেনি। তবে বর্তমান পৃথিবী একবিংশ শতকে প্রবেশ করলেও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতায় যে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি উদ্দীপকের ঘটনাই তার প্রমাণ। পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পে বর্ণিত সামাজিক অসঙ্গতিরই প্রতিফলিত চিত্র।


২. গৌরী ও সঞ্জয় অনেকদিন ধরে একই অফিসে চাকরি করছে, কিন্তু সহকর্মীরা জানে না দুজনার অন্তরে গভীর ক্ষত। গৌরীকে নিজে পছন্দ তাই করে বিয়ে করতে চেয়েছিল সঞ্জয়। বছর পাঁচেক আগে লোক খাওয়ানো নিয়ে বিয়ে ভেঙেছে তাদের। পিতৃহীন সঞ্জয় কাকার আশ্রয়ে মানুষ, তার দোষ জেনেও প্রতিবাদ করতে পারেনি। একদিন গৌরীর কাছে নিজের অসহায় অবস্থার কথা তুলে ধরে সঞ্জয়। বলে, তার জন্য সে সারা জীবন অপেক্ষা করবে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গৌরী বলে, “কী দরকার, এই তো বেশ আছি।”

ক) কোন কথা স্মরণ করে অনুপমের মামা ও মা ‘একযোগে বিস্তর হাসিলেন’?
খ) “মেয়ের চেয়ে মেয়ের বাপের খবরটাই তাহার কাছে গুরুতর” —উক্তিটি বুঝিয়ে লেখ।
গ) উদ্দীপকের সঞ্জয় ‘অপরিচিতা’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে? বুঝিয়ে দাও।
ঘ) “এই তো বেশ আছি!” গৌরীর এই উক্তিতে ‘অপরিচিতা’ গল্পের পরিণতি প্রতিফলিত হয়েছে”।

২ নং প্রশ্নের উত্তর

ক) গায়েহলুদের বাহকদের বিদায় করতে কনেপক্ষকে যে নাকাল হতে হবে, সে কথা স্মরণ করে অনুপমের মামা ও মা ‘একযোগে বিস্তর হাসিলেন’।

খ) অনুপমের জন্য তার মামার বিস্তর পণসমেত দাসীরূপী কনে পাওয়ার অভিপ্রায় বোঝাতে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করা হয়েছে। —উক্তিটি মূল্যায়ন কর। অনুপমের মামা ভাগনের জন্য এমন কনে আনতে চান, যে ধনীর কন্যা নয়, কিন্তু যার বাবা পণ হিসেবে টাকা দিতে কসুর করবে না। এতে করে তাকে শোষণ করা চলবে, কিন্তু কোনো কিছুতেই প্রতিবাদ করবে না। ধনীর কন্যা হলে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমস্যা হতে পারে। তাই মেয়ের চেয়ে মেয়ের বাপের খবরটাই অনুপমের মামার কাছে অধিক গুরুতর।

গ) উদ্দীপকের সঞ্জয় ‘অপরিচিতা’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র অনুপমের প্রতিনিধিত্ব করে। উদ্দীপকের সঞ্জয় তার মানসপ্রিয়া গৌরীর সাথে একই অফিসে চাকরি করে। অফিসের কেউ জানে না পাঁচ বছর আগে তাদের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। পিতৃহীন সঞ্জয়ের অভিভাবক কাকার দোষে সেই বিয়ে ভেঙে যায়। মানসিক দৃঢ়তার অভাবে সঞ্জয় সেই সময় কাকার অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারেনি।

বহুদিন পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে গৌরীর কাছে নিজের অসহায় অবস্থার কথা তুলে ধরে। বলে, তার জন্য সে সারা জীবন অপেক্ষা করবে। তবে এমন প্রস্তাবে গৌরী সাড়া দেয়নি। সঞ্জয়ের মতো অনেকটা একই রকম ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে দিয়ে যেতে দেখা যায় ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমকে। সঞ্জয়ের মতোই অনুপমেরও বিয়ের পাত্রীর প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা ছিল। কিন্তু বিয়ে বাড়িতে সে মামার অন্যায় সিদ্ধান্তই মেনে নেয়। অন্যায় জেনেও সে যৌতুকের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ জানাতে পারেনি।

নিজের বিয়ের বিষয়েও কোনো দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে সেই বিয়ে ভেঙে যায়। বহুদিন পরে সেই পাত্রী কল্যাণীকে কাছে পেয়ে নিজের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে অনুপম। কিন্তু তত দিনে কল্যাণী দেশমাতৃকার সেবায় নিয়োজিত, বিয়েতে অনাগ্রহী। তাই কল্যাণীর সাহচর্য পেয়েও অনুপমের সে মানসপ্রিয়া চির অপরিচিতই থেকে যায়। সুতরাং বলা যায়, যথাসময়ে সঠিক অবস্থান নিতে না পারায় একই ধরনের পরিণতি ভোগ করার দিক থেকে উদ্দীপকের সঞ্জয় ও গল্পের অনুপম সমার্থক চরিত্রের অধিকারী।

ঘ) “এই তো বেশ আছি।’ গৌরীর এই উক্তিতে ‘অপরিচিতা’ গল্পের পরিণতি প্রতিফলিত হয়েছে” —উক্তিটি যুক্তিসঙ্গত। জীবনে প্রাপ্তিই শেষ কথা নয়। অনেক সময় প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষাও পরম তৃপ্তি দিতে পারে। না পাওয়ার যে বেদনা তা-ও ম্লান হয়ে যায় এই স্বর্গীয় অনুভূতির কাছে। উদ্দীপকের গৌরীর উক্তি ‘এই তো বেশ আছি।’ আর গল্পের অনুপমের অনুভব ‘এই তো জায়গা পাইয়াছি।’ তাই সমার্থক হয়ে ওঠে।

উদ্দীপকের গৌরীকে পছন্দ করে বিয়ে করতে চেয়েছিল সঞ্জয়। কিন্তু তার কাকার অনাকাঙ্ক্ষিত এক ভুলের মাশুল দিতে গিয়ে ভালোবাসার মানুষটির সাথে স্বর্গীয় বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেনি সে। সঞ্জয়ের এই ব্যর্থতায় গৌরী নিজেও বুকে ক্ষত চাপা দিয়ে বেঁচে আছে। পাঁচ বছর পর সঞ্জয় সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাইলে গৌরী বাধা দেয়। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, ‘কী দরকার, এই তো বেশ আছি।’ নিরুপায় সঞ্জয় গৌরীকে বিয়ে করতে না পারলেও সারাজীবন তার পাশে থাকার অঙ্গীকার করে। উদ্দীপকের সঞ্জয়ের অনুরূপ পরিণতি গল্পের অনুপম আর কল্যাণীও বরণ করেছে। অনুপম চোখে না দেখেও ভালোবেসেছে কল্যাণীকে। স্বপ্ন দেখেছে তাকে নিয়ে ঘর বাঁধার। কিন্তু বিয়ের আসরে মামার এক ভুলের খেসারত দিয়ে হাতছাড়া করেছে কল্যাণীকে।

অনুপম অপরিপক্বতার পরিচয় দিলেও কল্যাণী আর নিজেকে সংসারে জড়াতে চায়নি। ‘নারীশিক্ষার ব্রতকে নিজের জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে। বহুদিন পর কল্যাণীকে আবার খুঁজে পায় অনুপম। নিজের জীবনে সে আর কোনো নারীকে কামনা করেনি। কল্যাণীও আর কাউকে কল্পনা করেনি কোনো দিন। পরিবারের শত বাধা উপেক্ষা করে অনুপম ছুটে গেছে কানপুরে কল্যাণীর কর্মক্ষেত্রে। বিয়ের আশা না করলেও সব সময় কল্যাণীর পাশে থাকবে এটাই তার চাওয়া। অজানা কন্ঠের মধুর সুর বছরের পর বছর তাকে বিস্ময়াভিভূত করে রেখেছে। তাদের দেখা হয়। কণ্ঠ শোনে। যখন সুবিধা পায় কল্যাণীর কাজ করে দেয়ে অনুপম। যা করে কল্যাণীর মনে একটু জায়গা চায় সে। প্রেমিকার মন-মন্দিরে একটুখানি জায়গা পেয়েই সে স্বর্গীয় অনুভূতি লাভ করে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের সঞ্জয় ও গৌরী এবং গল্পের অনুপম ও কল্যাণীর জীবনধারা অনেকটা একই পথে ধাবমান।


অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ২০২৩

৩. হয়তো কিছুই নাহি পাব
তবুও তোমায় আমি দূর হতে ভালবেসে যাব।।
যদি ওগো কাদে মোর ভীরু ভালবাসা,
জানি তুমি বুঝিবে না তবু তারি ভাষা,
তোমারি জীবনে কাঁটা আমি, কেন মিছে ডাব।।

ক) ‘অপরিচিতা’ গল্পটি প্রথম কোথায় প্রকাশিত হয়?
খ) ‘তারপর বুঝিলাম, মাতৃভূমি আছে।’—বুঝিয়ে লেখ।
গ) উদ্দীপকের কথকের মনের ভাব ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মনোভাবের সাথে কতটুকু সম্পর্কিত? আলোচনা কর।
ঘ) উদ্দীপকে ‘অপরিচিতা’ গল্পের আংশিক ভাব প্রতিফলিত হয়েছে বিশ্লেষণ কর।

৩ নং প্রশ্নের উত্তর

ক) ‘অপরিচিতা’ গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত মাসিক ‘সবুজপত্র’ পত্রিকায়।

খ) অনুপম কল্যাণীর স্বদেশপ্রেম সম্পর্কে আলোচ্য কথাটি বলেছে। অনুপমের সাথে কল্যাণীর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। সেই বিয়ে ভাঙার পর থেকে কল্যাণী পণ করেছে কোনো দিন বিয়ে করবে না। দেশের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার ব্রতে কল্যাণী ত্যাগ করেছে জাগতিক মোহ। দেশমাতার সেবায়, মেয়েদের শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তার এই প্রতিজ্ঞা থেকে কেউ তাকে এক বিন্দু টলাতে পারেনি। কল্যাণীর এভাবে মাতৃভূমির চরণে নিজেকে সঁপে দেওয়া প্রসঙ্গে অনুপম প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করেছে।

গ) উদ্দীপকের কথকের মনের ভাব ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মনোভাবের সাথে পুরোপুরি সম্পর্কিত। প্রকৃত প্রেম বিনিময় প্রত্যাশী নয়। আর সব প্রেম পরিণয় পর্যন্তও গড়ায় না। তবে তাতে প্রকৃত প্রেমিকের কিছুই যায় আসে না। প্রেমের আগুনে পোড়া মন কেবল ভালোবাসার তৃপ্ততা পেলেই শান্ত হয়। উদ্দীপকের কথক এমনই প্রেমমালা গেঁথেছেন প্রেমিকার তরে। ভীরু প্রেমিকের ক্রন্দন প্রেমিকা বুঝতে অপারগ হবে এটাই স্বাভাবিক, তবে নিজেকে কাঁটা ভেবে তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা সহজেই পাঠক হৃদয়ে উত্তীর্ণ হয়। ধন্য এই প্রেম, ধন্য এই প্রেমিকার জীবন। অনেকটা একই রকম নিষ্কাম প্রেমের মূর্ছনা ‘অপরিচিতা’ গল্পের পরিণতিকে অনন্য করে তুলেছে।

আলোচ্য গল্পের অনুপমের মনে প্রেমের আবেশ ছড়িয়েছিল তার সাথে বিয়ে হতে যাওয়া কল্যাণী। যৌতুকলোভী মামার সিদ্ধান্ত অধোবদনে মানতে গিয়েই কল্যাণীকে বিয়ে করা থেকে বঞ্চিত হয়েছে অনুপম। পরবর্তীকালে কল্যাণীর সাথে সাক্ষাৎ হলে অনুপমের মনের সেই আকর্ষণ তীব্র মোহে পরিণত হয়। বিয়ের আশা না করলেও দূর থেকে ভালোবেসে কল্যাণীর পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। দেখা হয়। কণ্ঠ শোনে। প্রেমিকার মন-মন্দিরে একটুখানি জায়গা পেয়েই সে স্বর্গীয় অনুভূতি লাভ করে। তাই বলা যায়, অনুপমের মনে বয়ে চলা ভাবই যেন কাব্যরূপ পেয়েছে উদ্দীপকের চরণমালায়।

ঘ) উদ্দীপকে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অন্যতম দিক কামনাশূন্য প্রেমিকের বিরহী ভাব প্রতিফলিত হয়েছে মাত্র। ‘অপরিচিতা’ গল্পটি বিশ শতকের সূচনা লগ্নের সমাজবাস্তবতার প্রেক্ষাপটে রচিত। এই গল্পে যৌতুক প্রথার ঘৃণিত রূপ যেমন ফুটে উঠেছে, তেমনি আছে এর বিরুদ্ধে নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রতিরোধের কথকতাও। তবে এসব কিছু ছাপিয়ে গল্পটিকে ভিন্ন মাত্রা এনে দিয়েছে এক ভীরু কাপুরুষের অপরিণত ভালোবাসার উপাখ্যান।

উদ্দীপকে এক আপাত ব্যর্থ প্রেমিক হৃদয়ের হাহাকার ধ্বনিত হয়েছে। মনের অব্যক্ত কান্না আর প্রেমিকার প্রতি অপ্রতিরোধ্য ভালোবাসাই যার সম্বল। এই প্রেম একমুখী ও দূরাশ্রয়ী, প্রেমিকার বোধের অগম্য। তবে তাতে ভালোবাসার ঘাটতি পড়ে না এতটুকু, কেননা ভালোবাসার জন্ম প্রতিদানের আশা থেকে হয় না। নায়িকা কল্যাণীর প্রতি এমনই সকরুণ প্রেমঘন হৃদয়ের আর্তি প্রকাশ পেয়েছে আলোচ্য গল্পের অনুপমের মনেও। তবে তা গল্পের সামগ্রিক ভাবের অতি ক্ষুদ্রাংশ মাত্র। আলোচ্য গল্পটির সূচনা এক শিক্ষিত ছেলের ব্যক্তিত্বহীনতা ও পরিবারতন্ত্রের কাছে তার অসহায় নতি স্বীকারের মধ্য দিয়ে। তারপর ধীরে ধীরে বিয়ে উপলক্ষে যৌতুক নিয়ে নারীর চরম অবমাননার প্রতিবাদ গল্পটির অন্যতম উপজীব্য হয়ে উঠেছে। কন্যার লগ্নভ্রষ্ট হওয়ার লৌকিকতাকে অগ্রাহ্য করে পিতা শম্ভুনাথ সেনের নির্বিকার অথচ বলিষ্ঠ প্রত্যাখ্যান নতুন এক সময়ের আশু আবির্ভাবকেই সংকেতবহ করে তোলে।

গল্পের শেষাংশে কর্মীর ভূমিকায় আত্মপ্রত্যয়ী কল্যাণীর আত্মপ্রকাশও নারী জাগরণের ইঙ্গিতবহ। আর সবশেষে গল্পটি রূপ নিয়েছে মনস্তাপে ভেঙে পড়া এক ব্যক্তিত্বহীন যুবকের অকপট স্বীকারোক্তির অনন্য পক্তিমালায়। তার জবানিতে পুরুষতন্ত্রের অমানবিকতার স্ফুরণ যেমন ঘটেছে, তেমনি নারীর প্রশস্তিও কীর্তিত হয়েছে। সুতরাং বলা যায়, আলোচ্য গল্পের বিস্তৃত কাহিনিপটের অতি সামান্য অংশই উদ্দীপকে বিধৃত হয়েছে।


🔰🔰 আরও দেখুন: অপরিচিতা গল্পের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন PDF সহ


৪. প্রজাপতির দুই পক্ষ। বরপক্ষ এবং কন্যাপক্ষ। বরপক্ষ কন্যাপক্ষের কাছে নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা ও পাঁচ ভরি স্বর্ণালঙ্কার চেয়ে বসল। নিত্যানন্দ রায় কোনো কিছু বিবেচনা না করে তাতেই মেয়ের বিয়ে দিতে সম্মত হয়ে গেল। তার মতে, এমন শিক্ষিত ছেলে আর বনেদি পরিবার কিছুতেই হাতছাড়া করা যায় না। তার ইচ্ছায় যথারীতি আশীর্বাদ পর্ব শেষে শুভবিবাহের দিন ধার্য হয়ে গেল। নিত্যানন্দ অনেক কষ্ট স্বীকার করে বিয়ের যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করার পরও নিতান্ত এক তুচ্ছ কারণে বিয়ের আসরেই এই বিয়ে ভেঙে যায়।

ক) “অপরিচিতা’ গল্পের মামা অনুপমের চেয়ে কত বছরের বড়?
খ) “একে তো বরের হাট মহার্ঘ, তাহার পরে ধনুক-ভাঙা পণ” — এই কথার অর্থ বুঝিয়ে দাও।
গ) উদ্দীপকের নিত্যানন্দ রায়ের সঙ্গে ‘অপরিচিতা’ গল্পের শম্ভুনাথের সাদৃশ্য নির্ণয় কর।
ঘ) তুমি কি মনে কর, যৌতুক প্রথাই বিয়ে ভেঙে যাওয়ার একমাত্র কারণ? উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ গল্পের আলোকে বিচার কর।

৪ নং প্রশ্নের উত্তর

ক) ‘অপরিচিতা’ গল্পের মামা অনুপমের চেয়ে বড়জোর বছর ছয়েক বড়।

খ) ‘প্রশ্নোক্ত কথাটি দিয়ে কল্যাণীর জন্য সুযোগ্য বর খুঁজে পেতে তার বাবার ক্রমাগত অপেক্ষার কথা বোঝানো হয়েছে। বিশ শতকের সূচনালগ্নে কনের বয়স পনেরো হওয়াটা সন্দেহের বিষয়বস্তু ছিল। কনের বংশে নিশ্চয়ই কোনো দোষ আছে, এমনটাই ভাবা হতো তখন। যখন জানা গেল অনুপমের পাত্রীর বয়স পনেরো, তখন স্বভাবতই বরপক্ষের কপালে ভাঁজ পড়ল। আদতে বিষয়টা ছিল পুরোপুরি ভিন্ন। সুযোগ্য বর খুঁজে পাওয়াটা কঠিন, তারপরে কনের বাবা খুব জেদি স্বভাবের মানুষ। তাই তিনি কেবলই অপেক্ষা করে চলেছেন। এদিকে কনের বয়স বেড়েই চলেছে। এ বিষয়টি বোঝাতেই ‘ধনুক-ভাঙা পাণ’ এর কথা অবতারণা করা হয়েছে।”

গ) বনেদি পরিবারে শিক্ষিত ছেলের হাতে কন্যা সম্প্রদানের মরিয়া প্রচেষ্টার দিক থেকে উদ্দীপকের নিত্যানন্দ রায়ের সঙ্গে ‘অপরিচিতা’ গল্পের শম্ভুনাথের সাদৃশ্য রয়েছে। আমাদের সমাজে এক বিষময় প্রথার নাম যৌতুক। বরপক্ষের একটা প্রাণপণ প্রচেষ্টা থাকে ছেলেকে শিক্ষিত করার খরচপাতি সুদে- আসলে কনের বাবার কাছ থেকে আদায় করে নেওয়ার। আবার অনেক ধনাঢ্য পরিবারও বিয়ের বাজারে নিজেদের বনেদিয়ানাকে নিলামে তুলতে কসুর করেন না। নিত্যানন্দ রায় ও শম্ভুনাথের ন্যায় মানুষগুলোর জন্যই তাদের এ প্রচেষ্টা সফল হয়। উদ্দীপকে দেখা যায়, কন্যা সম্প্রদানের এক সকরুণ চিত্র।

শিক্ষিত ছেলে আর বনেদি পরিবার পেয়ে নিত্যানন্দ রায় হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। বিয়েতে বরপক্ষ নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা ও পাঁচ ভরি স্বর্ণালঙ্কার চেয়ে বসলে তাতেই তিনি রাজি হয়ে যান। তাঁর মতে এমন পাত্র কিছুতেই হাতছাড়া করা যায় না। যদিও পরবর্তীতে তাঁর এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়, কারণ নিতান্ত এক তুচ্ছ কারণে সে বিয়ে ভেঙে যায়। ‘অপরিচিতা’ গল্পেও অনুরূপ দৃশ্যের মঞ্চায়ন ঘটে। শম্ভুনাথ বাবু সুযোগ্য বর খুঁজে পাওয়ার আশায় মেয়ের বয়স বাড়িয়ে তুলেছেন। অবশেষে যখন বনেদি পরিবারের শিক্ষিত ছেলে অনুপম পাত্র হিসেবে স্থির হলো, তখন টাকার অঙ্ক বা স্বর্ণালঙ্কারের প্রশ্নে আর পিছু হটতে চাননি। তবে নিজে সর্বস্বান্ত হয়েও শেষ পর্যন্ত মেয়েকে পাত্রস্থ করতে পারেননি বরপক্ষের হীন মানসিকতার কাছে পরাস্ত হয়ে। আর এই বিষয়টিই উদ্দীপকের নিত্যানন্দ রায়ের সঙ্গে তাঁর সাদৃশ্য রচনা করে দিয়েছে।

ঘ) আমি মনে করি, যৌতুক প্রথাই বিয়ে ভেঙে যাওয়ার একমাত্র কারণ নয়। আমাদের সমাজে বিয়ে কেবলই সামাজিক বন্ধন সৃষ্টির উপলক্ষ নয়, কখনো কখনো এটি হয়ে ওঠে বাণিজ্যের মঞ্চও। তাই তো দুটি হৃদয়কে জোড়া দেওয়ার এই মহতী অনুষ্ঠানে অনেক সময় দেখা মেলে পরস্পরকে ঠকিয়ে জয়ী হওয়ার কুৎসিত প্রতিযোগিতা। তেমন ক্ষেত্রে বিয়ের অনুষ্ঠান পরিণত হয় মল্লযুদ্ধে অনেক সময় যার অবসান ঘটে দুই পক্ষেরই পরাজয়ের মধ্য দিয়ে।

যৌতুক প্রথা এই লড়াইয়ের প্রধান উপজীব্য হলেও আমাদের হীন মানসিকতা এর জন্য কম দায়ী নয়। উদ্দীপকে প্রজাপতির দুই পক্ষ অর্থাৎ বর ও কনে পক্ষের কথা বলা হয়েছে। নিত্যানন্দ রায় এদের একটি পক্ষ হয়ে অপর পক্ষ তথা বরপক্ষের সাথে সন্ধির যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করেন। বরপক্ষের দাবিকৃত পণের সমুদয় টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসমেত কনে সম্প্রদানের জন্য তৈরি হন। কিন্তু অতি ঠুনকো কারণে বিয়ের আসরেই বিয়ে ভেঙে যায়। ফলে তাঁর প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়। এখানে দেখা যাচ্ছে, ঘৃণিত পণ প্রথার গরল পান করেও নিত্যানন্দ রায় মেয়ের বিয়ে দিতে পারলেন না। এর জন্য পুরুষতন্ত্রের অমানবিকতা যেমন দায়ী, তেমনি বরপক্ষের লোভী বা হীন মানসিকতাও কম দায়ী নয়। আলোচ্য গল্পেও অনুরূপ ঘটনার দৃষ্টান্ত মেলে।

যৌতুকের নামে বরপক্ষের যাবতীয় আদেশ-ফরমায়েশ-আবদার মেনে নিয়েছিলেন শম্ভুনাথ সেন। কিন্তু বিয়ের আসরে গয়না যাচাইয়ের নামে কনের গা থেকে সমস্ত গয়না খুলে নেওয়াকে তিনি বরদাস্ত করতে পারেননি। বিয়ের কনে কল্যাণীও একে দেখেছে নারীত্বের অবমাননারূপে, যার ফলে সে আর বিয়েই করবে না বলে পণ করেছে। পরিশেষে তাই বলা যায়, যৌতুক প্রথা ছাড়াও সমাজে বিরাজমান নানামুখী বাস্তবতায়, বিশেষত অমোঘ পুরুষতন্ত্র, বরপক্ষের অতি লোভ বা হীন মানসিকতার কারণে বিয়ে ভেঙে যায়।


অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর পিডিএফ

৫. কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিতেন, কিন্তু বরের বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না। তিনি দেখিলেন, মেয়েটির বিবাহের বয়স পার হইয়া গিয়াছে, কিন্তু আর কিছু দিন গেলে সেটাকে ভদ্র বা অভদ্র কোনো রকমে চাপা দিবার সময়টাও পার হইয়া যাইবে। মেয়ের বয়স অবৈধ রকমে বাড়িয়া গিয়াছে বটে, কিন্তু পণের টাকার আপেক্ষিক গুরুত্ব এখনও তাহার চেয়ে কিঞ্চিৎ উপরে আছে, সেই জন্যই তাড়া।

ক) অনুপমের পিসতুতো ভাইয়ের নাম কী?
খ) “অন্নপূর্ণার কোলে গজাননের ছোট ভাইটি’ – উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
গ) উদ্দীপকের বরের বাপের সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মামার সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ) “উদ্দীপকের ঘটনাচিত্রে ‘অপরিচিতা’ গল্পের খণ্ডাংশ প্রতিফলিত হয়েছে” – উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

৫ নং প্রশ্নের উত্তর

ক) অনুপমের পিসতুতো ভাইয়ের নাম বিনু।

খ) ‘অন্নপূর্ণার কোলে গজাননের ছোট ভাইটি’ কথাটি দ্বারা অনুপম নিজেকে সুবোধ বালক হিসেবে ব্যক্ত করেছে। জগতে অনেক মানুষ রয়েছে যাদের বয়স বাড়লেও ছেলেমানুষী ভাব দূর হয় না। নিজের জগৎটা ঘরের অন্দরেই থেকে যায়। পিতৃহারা অনুপম ছোটবেলা থেকে মায়ের কাছে মানুষ হয়েছে। সংসারে প্রাচুর্যের কোনো অভাব ছিল না। সে কোলে কোলেই মানুষ হয়েছে। এজন্য পরিণত বয়সেও সে কোলের শিশুর মতো রয়ে গেছে। বিয়ের জন্য এ ধরনের বালকসুলভ আচরণ যথোপযুক্ত নয়। এজন্য সুবোধ বালকের এ গুণটিকে ব্যঙ্গ করে অনুপ্রম আলোচ্য উক্তিটির অবতারণা করেছে। অর্থাৎ গজাননের কোলের ভাই যেমন যুদ্ধ সৈনিক হতে পারে না, তেমনি আলোচ্য উক্তি দ্বারা বোঝা যায়, অনুপমও বিয়ের জন্য সুপাত্র নয়, মানুষ হিসেবে সুবোধ বালক মাত্র।

গ) পণলোভী মানসিকতার দিক দিয়ে মিল থাকলেও খুঁতখুঁতে স্বভাব, কর্তৃত্বপরায়ণতা, পরকে ঠকিয়ে নিজে জিতার প্রবণতা প্রভৃতি দিক দিয়ে উদ্দীপকের বরের বাপের সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মামার অমিল রয়েছে। বিয়ে এমন এক সামাজিক রীতি, যা যথাসময়ে সম্পন্ন হওয়াই উত্তম। তবে এ শাশ্বত নিয়মে বাধ সাধে যৌতুক নামক এক সর্বনাশা ব্যাধি। তাছাড়া মহার্য বরের হাটে যোগ্য বর খুঁজে পেতেও কন্যার বাবাকে হিমশিম খেতে হয়। আর যদি বরের অভিভাবকগণ হন যৌতুকলোভী, কর্তৃত্বপরায়ণ ও খুঁতখুঁতে মেজাজের তাহলে তো ভোগান্তির কোনো অন্তই থাকে না।

উদ্দীপকের বরের বাবা ও আলোচ্য গমের মামা এমন চরিত্রের অধিকারী দুই ব্যক্তি। এক সময়ে কন্যাদের অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়ার রীতি ছিল। বিয়ের বাজারে বয়স্ক মেয়েদের মূল্য ছিল সবচেয়ে কম। তবে চাহিদানুযায়ী যৌতুক দিতে পারলে বেশি বয়সী মেয়েদের বিয়ে দিতে সমস্যা হতো না। বরের বাবা যৌতুকের লোভে বয়স্কা মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিতো। ‘অপরিচিতা’ গল্পের মামাও পাত্রীর বয়স বেশি দেখে, বেশি পণ পাবার লোভে অনুপমের বিয়েতে রাজি হন। উদ্দীপকের বরের বাপের ক্ষেত্রেও অনুরূপ মানসিকতা দৃশ্যমান। আর অধিক পণ প্রাপ্তির যে নেশা সেদিক থেকে বরের বাপ ও অনুপমের মামার মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। তবে মামার চরিত্রের সামগ্রিকতা বরের বাপের চরিত্রে ফুটে উঠেনি। প্রথমত, মামা ছিলেন কর্তৃত্বপরায়ণ স্বভাবের।

পারিবারিক সিদ্ধান্তের দায়িত্ব মামার একার। তাছাড়া মামা ছিল খুঁতখুঁতে স্বভাবের। তিনি স্বর্ণ পরখ করার জন্য বিয়ের “আসরেই সেকরা নিয়ে আসেন। কন্যার বাপ যেনো তাদের না ঠকাতে পারে সে জন্য তিনি সদা সজাগ। পণ হিসেবে কী কী দেওয়ার কথা ছিল এবং কী দিচ্ছেন তার সবই তিনি খাতায় লিখে রাখেন। সবুর করে চলার মানসিকতাও অনুপমের মামার চরিত্রের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। অনুপমের তাড়া উপেক্ষা করেও মামা অপেক্ষা করেন মনের মতো পরিবারের জন্য। সুতরাং বলা যায়, পাত্রীপক্ষের সম্পদের প্রতি লোভী মানসিতার দিক থেকে উদ্দীপকের বরের বাবা এবং ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মামার মধ্যে মিল থাকলেও মামার অন্যান্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য উদ্দীপকের বাবার মাঝে অনুপস্থিত।

ঘ) উদ্দীপকের ঘটনাচিত্রে ‘অপরিচিতা’ গল্পের খণ্ডাংশ প্রতিফলিত হয়েছে- উক্তিটি যথার্থ। পণপ্রথার, ঘৃণিত রূপ উদ্দীপক এবং ‘অপরিচিতা’ গল্পে সমভাবে দৃশ্যমান। কিন্তু গল্পে বর্ণিত এক শিক্ষিত ছেলের ব্যক্তিত্বহীনতা, পরিবারতন্ত্রের কাছে তার নতিস্বীকার এবং এর বিপরীতে গণপ্রথা প্রতিরোধ, দেশাত্মবোধের চেতনা ও নারী জাগরণের চিত্র উদ্দীপকে স্থান পায়নি।

উদ্দীপকের ক্ষুদ্র প্রেক্ষাপটে ‘গৌরিদান’ ও ‘পণপ্রথা’র সকরুণ চিত্র উপস্থাপিত। এখানে নারীর ‘অধিক’ বয়সকে তার ঘাটতি বা দুর্বলতা এবং পণ প্রদানের ক্ষমতাকে সেই ‘ঘাটতি কাটিয়ে উঠার যোগ্যতা’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এ থেকে নারীর স্বকীয়তা বা আত্মপরিচয়ের মহিমা সমাজে কতটুকু স্বীকৃত তা সহজেই অনুমান করা যায়। ক্ষেত্রে সমাজে জেঁকে বসা পণপ্রথা যে পুরুষতন্ত্রেরই হাতিয়ার, নারীত্বের অবমাননার দলিল সে কথাও বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না। তবে এ থেকে পরিত্রাণের উপায় উদ্দীপকে বর্ণিত হয়নি। তার জন্য আমাদের দৃষ্টিপাত করতে হবে ‘অপরিচিতা’ গল্পে। কেননা, সেখানে পণপ্রথার বিরুদ্ধে নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রতিরোধের কথা বলা হয়েছে।

বিয়ে উপলক্ষে যৌতুক নিয়ে নারীর চরম অবমাননার প্রতিবাদ গল্পটির অন্যতম উপজীব্য। কন্যার লগ্নভ্রষ্ট হওয়ার লৌকিকতাকে অগ্রাহ্য করে পিতা শম্ভুনাথ সেনের নির্বিকার অথচ বলিষ্ঠ প্রত্যাখ্যান নতুন এক সময়ের আশু আবির্ভাবকেই সংকেতবহ করে তুলেছে। গল্পের শেষাংশে কর্মীর ভূমিকায় আত্মপ্রত্যয়ী কল্যাণীর আত্মপ্রকাশও নারী জাগরণের ইঙ্গিতবহ। পরিশেষে বলা যায়, ‘অপরিচিতা’ গল্পটি মনস্তাপে ভেঙে পড়া এক ব্যক্তিত্বহীন যুবকের স্বীকারোক্তির অকপট পক্তিমালা। তার জবানিতে পুরুষতন্ত্রের অমানবিকতার স্ফুরণ যেমন ঘটেছে, তেমনি নারীর প্রশস্তিও কীর্তিত হয়েছে। আর সমাজচিত্রের এমন বিস্তৃত কাহিনিপট উদ্দীপকে বিধৃত না হওয়ায় প্রশ্নোক্ত কথাটি সম্পূর্ণ যৌক্তিক হিসেবে বিবেচিত হবে।


আশাকরি “অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ২০২৩” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। ভিডিও ক্লাস করতে সাবক্রাইব করে রাখতে পারেন আমাদের YouTube চ্যানেল এবং আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে চাইলে কানেক্ট থাকতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজে।